Tuesday, March 9, 2021

ঝালকাঠিতে প্রতিনিয়ত নিত‍্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম নাগালের বাইরে

ঝালকাঠি প্রতিনিধি:–মো জাহিদ ঝালকাঠিতে প্রতিনিয়ত নিত‍্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম নাগালের বাইরে,তাছাড়া কয়েক মাস ধরে বাড়তে থাকা চালের দাম এখনো ঊর্ধ্বগতি । পাশাপাশি ভোজ্য তেল, ডাল, আটা, ময়দা, চিনিসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও বেড়েই চলেছে । এছাড়া বেড়েছে মাছের দাম ও ব্রয়লার মুরগির দাম। ফলে নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে নিম্ন আয়ের মানুষের। এদিকে, প্রকৃতি থেকে শীত বিদায় নিলেও বাজারে এখনো উঠছে শীতের সবজি।

 তাই সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে সবজির দাম। বেশির ভাগ সবজি পাওয়া যাচ্ছে ১৫ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে। তবে নতুন যেসব সবজি উঠছে, তার দাম কিছুটা বাড়তি। ঢেঁড়স, পটল ও করলার কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার ঝালকাঠি শহরের বড় বাজার, পূর্ব চাদকাঠী বাজার এবং অন‍্যান‍্য বাজার ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে। ওই দুটি বাজারে প্রতি কেজি চিকন মিনিকেট চাল ৬২-৬৪ টাকায়, নাজির শাইল ৬৮ থেকে ৭০ টাকায়, ভালো মানের বিআর-২৮ চাল ৫০-৫৪ টাকায়, পাইজাম ৪৮-৫০ টাকায় এবং মোটা গুটি ও স্বর্ণা চাল ৪৪-৪৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১২০-১২৬ টাকায়। বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়।

এছাড়া খুচরা দোকানে মোটা দানার মসুর ডাল ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আটা কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা ও চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬৮ টাকা দরে। আদা ৮০ টাকা, রসুন (চিনা) ১২০ টাকা, আলু ২৫ টাকা ও পেঁয়াজ ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজার করতে আসা ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক মাস ধরে চালের চড়া দামে কোনো হেরফের হয়নি। আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। গত দেড় মাসে তেল, ডাল, আটা, ময়দা, চিনিসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। এতে হিমশিম খেতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষের। একের পর এক জিনিসের দাম বেড়েই চলছে।

 কিন্তু বাড়েনি আয়। পরিস্থিতি এমন হয়েছে, নিম্ন আয়ের মানুষের টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে। ক্রেতাদের মতে, দামের এই লাগাম এখনই টেনে ধরা না হলে আসছে শবে বরাত, রমজান মাস ও ঈদুল ফিতরে সীমিত আয়ের মানুষেরা পড়বেন মহাসঙ্কটে। দামের এই লাগাম টানতে হলে উৎপাদন ও পাইকারি পর্যায়ে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। আমদানির ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি বাড়াতে হবে তদারকিও। তাদের অভিযোগ, বিভিন্ন শ্রেণির ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি করছেন। সরকারকে কঠোর হাতে অসাধু এসব ব্যবসায়ীকে দমন করতে হবে।

 এদিকে, খুচরা বাজারে শীতের সবজি ফুলকপি ২০ টাকা, শিম ২০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ১৫ টাকা, শালগম ২০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, গাজর ৩০ টাকা, ধনেপাতা ৬০ টাকা, শসা ৩০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, বেগুন ৩০ টাকা, টমেটো ২০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ টাকা, মটরশুঁটি ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২০ টাকা কেজি করে বিক্রি হচ্ছে। গ্রীষ্মের আগাম সবজি ঢেঁড়স ৭০ টাকা, পটল ৭০ ও করলার কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারের সবজি বিক্রেতারা জানান, সবজির দামে কোনো হেরফের হয়নি। বরং কয়েকটি শীতের সবজির দাম কমেছে। শীত বিদায় নিলেও বাজারে শীতের সবজি এখনো প্রচুর। তবে শীতের সবজির সরবরাহ কমে গেলেই সবজির দাম বেড়ে যাবে। এদিকে, গত দেড় মাস ধরে মুরগির দাম বাড়ছে। বিক্রেতাদের দাবি, পোলট্রি খামারে বাচ্চা মুরগির দাম বেড়ে যাওয়া এবং উৎপাদনের চেয়ে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে।

পুরান বড় বাজার ও পূর্ব চাদকাঠী বাজারের দোকানে দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৫২০ টাকা, ব্রয়লার ১৪০-১৫০ টাকা, লেয়ার ও কক ২৪০ টাকা, সোনালি বিক্রি হয়েছে ২৭০ টাকা কেজি দরে। ফার্মের মুরগির ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৬২০ টাকা, খাসির মাংস ৮৫০-৯০০ টাকা দরে। বাজারে তেলাপিয়া মাছ কেজি প্রতি ১২০-১৪০ টাকায়, পাঙাশ ১৫০ টাকায়, চাষের কই ২৫০ টাকায়, পোয়া ৫০০ টাকায়, মাঝারি সাইজের শোল ৪৫০ টাকায়, শিং ৭০০ টাকায়, রুই ও কাতল ৩০০-৩৫০ টাকায়, ছোট সাইজের চিংড়ি ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

শহরের বড়  বাজারে একজন ক্রেতা মোঃ আব্দুল হান্নান বলেন,  বহু বছর যাবত সৌদিআরবে চাকরি করে কিছু টাকা জমিয়ে দেশে এসে ছোট্ট একটা দোকান দিয়ে ব‍্যবসা শুরু করে ছিলাম কিন্তু বতর্মানে যেভাবে লাগামহীন ভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়েই চলেছে তাতে ঘর ভাড়া এবং সদয়-পাতি কেনা (ক্রয় করা) খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে । চাল, তেল, চিনি, আদা, রসুনসহ সব জিনিসের দাম বেড়েই চলেছে। কিন্তু আয় বাড়েনি। দু’বেলা সন্তানদের নিয়ে খেয়ে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।  নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সামনে রমজান তাই দাম বাড়ার আরও আশঙ্কা রয়েছে।

জেলা বাজার নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা বলেন, ‘মূল্য তালিকা টানানো, ক্রয় রশিদ প্রদান ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজারগুলো প্রায়ই পরিদর্শন করা হচ্ছে। তবে বেশ কিছু দোকান ও আড়তে মূল্য তালিকা টানানো ও হালনাগাদে অনীহা দেখা গেছে। তাদেরকে মূল্য তালিকা টানানো ও হালনাগাদ রাখতে অনুরোধ করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাজার পরিদর্শেনর সময় কোন ক্রেতা আমাদের কাছে বেশি দাম রাখার অভিযোগ করেনি। এরপরও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজার পরিদর্শন আরও জোরদার করা হবে।’


No comments:

Post a Comment